মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :
পবিত্র ঈদুল আজহার মুসল্লীদের বরণে প্রস্তুত কক্সবাজার কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দান কর্তৃপক্ষ। এজন্য প্রায় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে শনিবার (৭ জুন) ঈদুল আজহার জামাত হবে ২টি। প্রথম জামাত হবে সকাল সাড়ে ৭টায়। প্রথম জামাতে ইমামতি করবেন কক্সবাজার কেন্দ্রীয় মডেল মসজিদের খতিব আল্লামা মাহমুদুল হক। দ্বিতীয় জামাত হবে সকাল সাড়ে ৮টায়। দ্বিতীয় জামাতে ইমামতি করবেন ঈদগাহ ময়দান জামে মসজিদের খতিব মুফতি মাওলানা সোলাইমান কাসেমী। ২০২৪ সাল থেকে কক্সবাজার কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহায় পর পর ২টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
গত ২০ মে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্ উদ্দিনের সভাপতিত্বে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইমরান হোসাইন সজীব এর সঞ্চালনায় ঈদুল আজহা উদযাপন বিষয়ক এক প্রস্তুতি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
কক্সবাজার পৌরসভার প্রশাসক রুবাইয়া আফরোজ জানিয়েছেন, কক্সবাজার কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে জেলার প্রধান ঈদুল আজহার জামাতের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। ময়দানের কাজ ইতিমধ্যে প্রায় ৯৫% সম্পন্ন হয়েছে। সম্মানিত মুসল্লীরা সাবলীল ও সুন্দরভাবে পরিচ্ছন্ন ও উৎসবমুখর পরিবেশে যাতে ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করতে পারেন সেজন্য ২টি জামাতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিটি জামাতে ৮ হাজারের বেশী মুসল্লী নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বৃষ্টির কথা মাথায় রেখে প্যান্ডেলে ত্রিপল লাগানো সহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বৃষ্টি হলে ময়দান থেকে বৃষ্টির পানি দ্রুত নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে ৫ টি গেইট দিয়ে মুসল্লীরা প্রবেশ করতে পারবেন। ঈদগাহ ময়দানে ঈদুল আজহার জামাতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষনিক নজরদারিতে থাকবেন। কোন মুসল্লী অসুস্থ হলে যাতে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা সেবা দেওয়া যায়, সেজন্য মেডিকেল টিম প্রস্তুত থাকবে। কক্সবাজার জেলা পুলিশের উদ্যোগে ২ স্থরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া, র্যাব-১৫ এর চৌকস একটি টিমও সমন্বিত নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে। সাধারণ পোশাকে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনও দায়িত্ব পালন করবে। স্টেডিয়াম, স্টেডিয়ামের দক্ষিণ পাশের রোড, হাসপাতাল সড়ক ও জেলা পরিষদ মোড়ে আর্চওয়ে অর্থাৎ নিরাপত্তা গেইট বসানো হবে। কক্সবাজার জেলা পুলিশের উদ্যোগে ২ স্থরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ৩শত মুসল্লী যাতে একসাথে অজু করতে পারেন, সে ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী পরাক্রম চাকমা জানিয়েছেন, ময়দানে মুসল্লীদের জন্য অজুর ব্যবস্থা করা হয়েছে। পর্যাপ্ত সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। অত্যাধিক তাপমাত্রার কথা চিন্তা করে প্যান্ডেলে ১৫০ টির বেশি সিলিং ফ্যান লাগানো হয়েছে। তাছাড়া ২০টি স্ট্যান্ড ফ্যান ও ১০টি এয়ারকুলারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। লাগানো হয়েছে পর্যাপ্ত লাইট। রং দিয়ে সাজানো হয়েছে ময়দানের মিম্বর। মাইক ও সাউন্ড বক্স লাগানো হয়েছে পুরো প্যান্ডেল জুড়ে। বর্নিল সাজে সাজানো হয়েছে পুরো ময়দান। ৫টি গেইট থেকে মুসল্লীরা ময়দানে প্রবেশের সময় প্রত্যেককে এক বোতল আতর, ৫০০ মি:লি: মিনারেল পানি এবং টিস্যু উপহার দেওয়া হবে। ময়দানে মনিটরিং সেল সার্বক্ষনিক কাজ করবে। প্রয়োজনে জরুরি সেবা দিতে ফায়ার সার্ভিসকে এলার্ট রাখা হয়েছে।
কক্সবাজার পৌর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ময়দানে মুসল্লীদের জন্য পর্যাপ্ত সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। অত্যাধিক তাপমাত্রার কথা চিন্তা করে প্যান্ডেলে ১১০ টির বেশি ফ্যান লাগানো হয়েছে। তাছাড়া ১৫টি স্ট্যান্ড ফ্যান ও ১৫টি এয়ারকুলারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ময়দানে মনিটরিং সেল সার্বক্ষনিক কাজ করবে। শহরে ব্যানার সহ ১৫ টি তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে।
ঈদগাহে ময়দানে প্যান্ডেল নির্মাণ ও অন্যান্য আনুষাঙ্গিক কাজের দায়িত্ব প্রাপ্ত ইভেন্ট প্লাস এর সত্বাধিকারী মোরশেদ আলম জানান, ২০ থেকে ২২ ফুট উচ্চতা সম্পন্ন বিশাল প্যান্ডেলের আয়তন প্রায় ৬০ হাজার বর্গফুট। প্যান্ডেল নির্মাণ সহ আনুষঙ্গিক কাজ ইতিমধ্যে শতকরা প্রায় ৯৫ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। অবশিষ্ট কাজ শুক্রবার সকালের মধ্যে শেষ করা হবে। তিনি আরো জানান, তাঁর প্রতিষ্ঠানের সুনাম ও মুসল্লীদের আরো বেশী সেবাদানের কথা মাথায় রেখে অন্যান্য বছরের চেয়ে এবছর সম্মানিত মুসল্লীরা ঈদুল আযাহার নামাজ আদায়ে যাতে অধিকতর বেশী আনন্দ উপভোগ ও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, সেজন্য ময়দানে বাড়তি কিছু নান্দনিক আয়োজন করা হচ্ছে। তার মধ্যে, ছবি উঠানোর জন্য ২ টি ফটোবুথ, অত্যাধুনিক একটি ডিজাইন প্যান্ডেল, আধুনিক ও মনোরম গেইট নির্মান করা হয়েছে। যা মুসল্লীদের উৎসবের আমেজ বৃদ্ধি ও বিনোদনে ভূমিকা রাখবে বলে জানান, ইভেন্ট প্লাস এর সত্বাধিকারী মোরশেদ আলম। তিনি আরো জানান, পুরো ঈদগাহ ময়দান, প্যান্ডেল ও আশেপাশের এলাকাকে মনোরম সাজে সজ্জিত করা হচ্ছে।
কক্সবাজার বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সুত্রে জানা গেছে, ঈদগাহ ময়দানে সার্ক্ষনিক নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কক্সবাজার পৌরসভার প্রশাসক রুবাইয়া আফরোজ, ঈদুল ফিতর ব্যবস্থাপনা কমিটির আহবায়ক ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহিদুল আলম, কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী পরাক্রম চাকমা, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের জে.এম শাখার সহকারী কমিশনার, কক্সবাজার পৌরসভার দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কক্সবাজার কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানের প্রস্তুতি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শনকালে তাঁরা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদুল আজহা জামাত এর সার্বিক প্রস্ততি দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
এদিকে, ঈদুল আযাহার উদযাপন বিষয়ক প্রস্তুতি সভায় কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) শাহিদুল আলম আহবায়ক করে ১০ সদস্য বিশিষ্ট ঈদুল আজহার জামাত সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে একটি ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন, কক্সবাজার পৌরসভার প্রশাসক অথবা তাঁর প্রতিনিধি, পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের জে.এম শাখার সহকারী কমিশনার, নির্বাহী প্রকৌশলী পরাক্রম চাকমা, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ পরিচালক ফাহমিদা বেগম, জেলা তথ্য অফিসার, কক্সবাজার প্রেসক্লাবের প্রতিনিধি, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক, জেলা ইমাম সমিতির সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক। ব্যবস্থাপনা কমিটি কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিতব্য ঈদুল ফিতরের জামাতের সার্বিক প্রস্তুতি মনিটরিং করছেন বলে জানিয়েছেন।
